পশ্চিমী সূর্যের কমলা রঙ তখনও ম্লান হয়ে যায়নি। তেরছা আলোয় কি অদ্ভুত প্রশান্তি বৃষ্টিবিধৌত ওই টেরাকোটা মন্দিরকে ঘিরে। পায়ে পায়ে যখন মন্দিরের কাছে পৌঁছলাম, আরতি শুরু হতে বিশেষ দেরি নেই।
বেশিদিনের পুরনো নয়। বছর ছয়েক আগে তৈরি। প্রায় লাখ খানেক ইট পুড়িয়ে বছরখানেকের চেষ্টায় এই মন্দির। তবু কেন জানি না, মন্দিরের সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, কতদিনের পুরনো! পাদদেশে হালকা শ্যাওলা। মন্দিরের ছাদেও। অনেকটা বিষ্ণুপুর বা বাঁকুড়ার মন্দিরগুলোর ধাঁচে তৈরি। তবু কলকাতার অনতিদূরে এমন একটা মন্দির দেখে কেমন সম্ভ্রম জাগে।
শিখরপুরে আঁধার নামে। নিঃশব্দে এক এক করে জ্বলে ওঠে মন্দিরের আলো। কেমন একটা মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়। ঘোর ভাঙে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে। কাঁসর-ঘণ্টার ধ্বনিতে। দেবস্থানে রাম-সীতার বিগ্রহ। কিন্তু এ কোন পুরোহিত! গেরুয়া বসনে পুরোহিতের আসনে যাঁকে মন্ত্রোচ্চারণ করতে দেখছি, সে তো একরত্তি কিশোর! কিশোর কি? এ তো শিশু!



আট বছরের আদিত্য মিশ্র এক নিঃশ্বাসে মন্ত্র আওড়ে চলেছেন। দ্বিধাহীন, দুর্নিবার গতিতে। মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠছেন। দম নিতে থামছেন। পাশ থেকে প্রবীণ পুরোহিতরা বলছেন, ‘পানি পি লো বেটা’। আদিত্যর সেকথায় ভ্রুক্ষেপ নেই। আবার মন্ত্রোচ্চারণ রেলগাড়ি। কচি মুখে বারবার ফুটে উঠছে জেদ। কঠোর কৃচ্ছসাধনের মৌলিকতা। তবু লক্ষ্যে অবিচল ছোট্ট একটি ছেলে।







বৈদিক ভিলেজ স্পা অ্যান্ড রিসোর্ট বেড়াতে এসে টেরাকোটা মন্দিরের এই ‘ছোটো মহারাজ’-কে না দেখে, তাঁর সন্ধ্যারতি না দেখে যদি বাড়ি ফিরে যান, তাহলে আপনি ঠকবেন! রিসোর্টের আনন্দ, উচ্ছলতার পাশাপাশি যে এক অপার করুণাময়, সময় থেমে যাওয়া অভিজ্ঞতা আপনাকে আলিঙ্গন করার জন্য অপেক্ষা করছে, এই টেরাকোটা মন্দিরের দরজায় এসে না দাঁড়ালে সেই অনুভূতি থেকে আপনি বঞ্চিত।
আর ‘ছোটে মহারাজ’! তাঁকে না হয় একবার চাক্ষুষ করেই দেখুন না, কি বিচিত্র ব্যঞ্জনায় মন-প্রাণ ভরে ওঠে!